দি আজকের নিউজ ওয়েব ডেস্কঃ বর্তমান কালের একজন তরুণ লেখক এন কে মণ্ডলের লেখনী থেকে এবার প্রকাশিত হতে চলেছে নতুন উপন্যাস ‘সুন্দরী কন্যা’ । উপন্যাসটি বেশ কয়েকটি পর্বে সমাপ্ত । আজ থেকে ধারাবাহিকভাবে ‘সুন্দরী কন্যা’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হচ্ছে আমাদের সাইটে । লেখা পড়ে ভাল লাগলে আপনাদের মতামত জানতে দ্বিধা করবেন না ।
সুন্দরী কন্যা (তৃতীয় পর্ব)
বিকেলবেলায় আজিজ জামা প্যাণ্ট পরে বাড়ির উঠোনে দুর্বা ঘাসের উপরে ছোট্ট মাচায় বসে আছে ৷ পাশে রেডিও চলছে ৷ গান হচ্ছে ৷ আজিজের পল্লীগিতী গান খুবই পছন্দ ৷ সেটাই শুনছে ৷ মিডিয়াম ভলিয়মে সাউণ্ড দেওয়া আছে ৷ আজ আজিজকে একদম সুপার লাগছে ৷ শরীরের রঙ কালো হলেও বেশ মানাচ্ছে আজ ৷ শ্যামাবর্ণা ৷ মিডিয়াম পাতলা মোটা ৷ লেডিজ সাইকেলে পাশেই আছে ৷ সকালে সাইকেলটি তেল জল দিয়ে চকচকে করে রেখেছে ৷ প্যাণ্ট শার্ট দুটি গত দু-বছর আগে ঈদে কিনেছিল ৷ সেটাই পরে যাচ্ছে ৷
রহিম এসে ডাক দিতেই রেডিওটি ঘরে রেখে তালা বন্ধ করে চলল ভবানীপুরের উদ্দেশ্যে ৷ হ্যাঁ ভবানীপুরেই মেয়ে দেখতে যাচ্ছে ৷ রহিম সেখ আগে আগে যাচ্ছে ৷ আজিজ পিছনে পিছনে যাচ্ছে ৷ দুইখানা গ্রাম ছেড়ে অবশেষে পৌঁছালো ভবানীপুরে মেয়েপক্ষের বাড়িতে ৷ বাড়িতে তেমন একটা কেউ নেই ৷ দুজন বয়স্ক ব্যক্তি ও একজন মধ্যবয়স্ক লোক ৷ সবই পাড়ার ৷ আগে থেকেই থাকতে বলেছিল মেয়ের দিদিমা ৷ ওরাও গরীব, তবে কিছু দেওয়ার মত সামার্থ্য আছে ৷
রহিম সেখ ও আজিজ টিউবয়েলে হাত মুখ ধুয়ে খাটের উপর উঠে বসলো ৷ কিছুক্ষন পরে এক এক করে চা জল আসলো ৷ কিছুক্ষন পরে মিষ্টি, পরোটা, সব্জী, মাংস ইত্যাদি আসলো ৷ এসব খাওয়ার পরে ফল আসলো ৷ খাওয়া হল ৷ লোকজনের সঙ্গে কথা হচ্ছে মাঝে মধ্যে ৷ অবশ্য ঘটক মশাই বলছে ৷ আজিজ বসেই আছে ৷ ঘটক মশাই বলল, তাহলে মেয়েকে নিয়ে আসুন ৷ দেখা যাক নাকি, কি বলছেন ৷ মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিটি আরেকটি ঘরে চলে গেল মেয়েকে নিয়ে আসতে ৷ কয়েক মিনিট পরে মেয়েটি এসে চেয়ারে বসল খাটের সামনে ৷ ঘটক ও আজিজের সামনে ৷ মেয়েটি আজিজকে দেখে নি, মুখ ছাপড়িয়ে আছে ৷ আজিজ দেখতে ভালো পাচ্ছে না মুখটা ৷ ঘটক মুখটা উঁচু করতে বলাতে মুখটা উঁচু করতেই আজিজ চিনতে পারলো ৷ মেয়েটিও দেখতে পেলো আজিজকে ৷ আজিজের চেনা আছে, একদিন দেখা হয়েছিল ৷
প্রায় আজ থেকে তিন চার মাস আগের ঘটনা ৷ আজিজ মাঠ থেকে দুপুর বেলাতে বাড়ির দিকে ফিরছে ৷ মেয়েটি ( আলো) স্কুল থেকে বাড়ি যাচ্ছিলো ৷ মাঠের রাস্তা ৷ কেউ নেই ৷ সাইকেল নিয়ে যেতে অসুবিধে হচ্ছিলো ৷ মাঠের রাস্তা , এখন না হয় লাল মাটির রাস্তা হল ৷ মেয়েটি স্কুল থেকে বাড়ি যাচ্ছিল ৷ তখন মাঝ রাস্তা ৷ বৃষ্টি হচ্ছিল হঠাৎ করেই ৷ ব্যাপক রাস্তায় কাদায় ভরে গেছে ৷ সাইকেল গড়ছিল না ৷ কাদায় সাইকেল লেপ্টে গিয়েছিল ৷ বইখাতা ভিজে জবজবে হয়ে গিয়েছিল ৷ সাইকেল নিয়ে কাঁদছিলো এক প্রকার ৷ আজিজ ব্যাপারটি বুঝতে পেরে মেয়েটিকে বলেছিল ৷ আমি তোমায় সাহায্য করছি বোন তুমি বই খাতা সামলাও ৷ মেয়েটি ( আলো) গাছের তলায় দাঁড়ালো ৷ আজিজ বসে বসে সাইকেলের সমস্ত কাঁদা ছাড়িয়ে মাথায় করে নিয়ে যাবে বলে সিন্ধান্ত নিয়েছে ৷ আফ কিলোমিটার পরেই আবার লাল রাস্তা পাবে ৷ ওখানে সাইকেলে যাওয়া যাবে ৷ আজিজের পাশাপাশি আলো যাচ্ছিলো ৷ তখন আজিজের মাথায় সাইকেল ছিল ৷ ওই সময় আজিজ বলে উঠলো,
আজিজ : বোন একটা কথা বলতে চাই কিছু মনে করবে না তো ৷
মেয়েটি ( আলো) : না বলেন ৷ কোন সমস্যা নেই ৷ আলো মনে মনে ভাবছে, কি বলবে কে জানে ৷ তাঁর কোন ক্ষতি করবে নাতো সে ৷ হঠাৎ করেই আলোর ভঁঁয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো ৷ বৃষ্টির মধ্যে সমস্ত শরীরে কাঁটা কাঁটা দিয়ে উঠলো ৷
আজিজ : বোন যদি দয়া করে আমার সামনে এবং পাশে হাটবেন না, আমার পিছনে হাটলে ভালো হয় ৷ আমি খুব উপকৃত হয় ৷
আলো : কারণ জানতে পারি কি, যদি কিছু না মনে করেন ৷
আজিজ : না মানে, দেখুন, আমি তো পুরুষ মানুষ ৷ আপনি পাশে বা সামনে থাকেন তাহলে অনেক কিছু মনে আসতে পারে ৷ ফাঁকা মাঠ ৷ আমি চাই না যে, আমার মনে কোন শয়তান বসবাস করুক ৷
আলো : ঠিক আছে ৷ (চলবে)