দি আজকের নিউজ ওয়েব ডেস্কঃ এবারের বিধানসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের সব হিসেবনিকেশ উলটপালট করে দিয়েছেন একা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । যেখানে অমিত শাহ প্রতিটি দফার শেষে ঠিক কটি করে আসন পাচ্ছে বিজেপি জানিয়ে দিচ্ছিলেন, সেখানে ভোট গণনার পর দেখা গেল সব উল্টো । বরং আট দফা ভোটের প্রতিটি দফায় ক্রমশ গেরুয়া শিবিরের সাথে ব্যবধান বাড়িয়েছে তৃণমূল । শেষ পর্যন্ত ২১৩ তে থামল মমতা, অন্যদিকে বিজেপি একশোর গণ্ডি না পেরিয়ে ৭৭ । কিন্তু কেন এমন হল! এবার সেই কারন খুঁজতে মরিয়া হয়ে ময়দানে নামলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ । এবার বড় নেতার কাছ থেকে তথ্য নয়, দলের নিচু তলার কর্মীদের মতামত বিশ্লেষণ করতে চাইছেন অমিত শাহের কর্মীরা ।
এবার বিজেপির হেভিওয়েট নেতা, যেমন বাবুল সুপ্রিয়, স্বপন দাশগুপ্ত, লকেট চট্টোপাধ্যায়, রাহুল সিনহা কে নেই তালিকায়, জিততে পারলেন না । প্রাথমিকভাবে ধরা হচ্ছে, সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং জেলা স্তরের নেতাদের ‘অতিরিক্ত আত্মতুষ্টি’ হিসাব মেলাতে পারেনি । এর উপর রাজ্য নেতৃত্ব নিজেদের উপর ভরসা না করে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর নির্ভর করেছে বেশী । এমনটাই অভিমত উঠে আসছে নিচু তলার কর্মীদের কাছ থেকে ।
এদিকে আরও একটা তত্ত্ব উঠে এসেছে হারের কারন হিসাবে । আদি এবং নব্য বিজেপির মধ্যে “চোরা দ্বন্দ্ব “। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল থেকে যে সমস্ত সাংগঠনিক নেতা ভোটের আগে দল বদল করে এসে দায়িত্ব নিয়েছেন, তাদের সে ভাবে বড় কোনও সাংগঠনিক দায়িত্ব দিতে চাননি আদি নেতারা।একজন সাধারণ বিজেপি কর্মী জানিয়েছেন, ”আমার কাছে অমিত শাহের দপ্তর থেকে ফোন এসেছিল। হারের সব কারণ খুলে বলতে বলা হয়েছিল। মিনিট ৪০ আমার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তাতে বুথ স্তরের সংগঠন খারাপ হওয়াকেই মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরেছি। বলেছি, বুথ স্তরের সংগঠন ভাল না হওয়ায় ভোটের প্রচারে যেমন আমরা অনেকটা পিছিয়ে শুরু করেছিলাম, তেমনই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার স্লিপও বিলি করতে পারিনি।”
এদিকে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যাচ্ছে । সুত্রের খবর, অমিত শাহের দপ্তরের কর্মীদের কাছে এমন খবর আসা শুরু হয়েছে, যে, ভোটের দিন বুথ এজেন্ট দেওয়া থেকে শুরু করে গণনার দিনও এজেন্ট দেওয়া যায়নি। বিজেপির সাংগঠনিক ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে তৃণমূল যে সব জায়গায় জেতার কথা নয়, সেখানেও জিতে গিয়েছে। ফলে ২০১৯ শের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ১২১টি আসনে এগিয়ে থাকা গেরুয়া শিবিরকে মাত্র ৭৭ টি আসন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল ।
এরমধ্যে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে । জানা গেছে, বেশ কিছু কর্মী জানিয়েছেন, ভোটগণনার দিন শেষ পর্যন্ত গণনাকেন্দ্রে থাকতে দেওয়া হয়নি বিজেপি-র এজেন্টদের। বেশকিছু আসনের কথা উল্লেখ করে কর্মীরা জানিয়েছেন, ওই আসনে বিরাট ব্যবধানে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও বিজেপি কর্মীদের সেখান থেকে ভাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পরেই দেখা যায় সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে বড় ব্যবধানে জিতে গিয়েছে তৃণমূল। ওই ঘটনা সাংগঠনিক ত্রুটির কারণেই ঘটেছে বলে তাদের অভিমত।
বিজেপি কর্মীদের কাছে রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়েও খোঁজ খবর নেওয়া শুরু হয়েছে । রাজ্য বিজেপি থেকে কেন্দ্রে জানানো হয়েছে, ভোটের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন শাসক তৃণমূলের হাতে। এই বিষয়ে অমিতের দপ্তর থেকে কীভাবে কারা কেন হামলা চালাচ্ছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হচ্ছে । পাশাপাশি দলের নিচু স্তরের কর্মীদের প্রাথমিকভাবে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে ।