লকডাউনের মধ্যে ধর্নায় বসে গ্রেপ্তার হলেন বিজেপির তিন বিধায়ক
লকডাউনের মধ্যে ধর্নায় বসে গ্রেপ্তার হলেন বিজেপির তিন বিধায়ক

দি আজকের নিউজ ওয়েব ডেস্কঃ রাজ্যে এই ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির জন্য সবচেয়ে বেশী দায়ী করা হয়েছে অবিবেচকের মত নির্বাচনী প্রচারকে । রাজনৈতিক নেতারা আগামী দিনের কথা চিন্তা না করে যেভাবে করোনাবিধি তোয়াক্কা না করেই যথেচ্ছ প্রচার করেছেন, সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে কোভিদের সুপার স্প্রেডার । এবার গোটা রাজ্যে যেখানে কড়া লকডাউন ঘোষিত হয়েছে, সেখানেও রাজনৈতিক ধর্না ! এবার শিলিগুড়িতে রাজ্য সরকারের সমালোচনা হেতু ধর্নায় বসে গ্রেপ্তার হলেন তিন জন বিধায়ক ।

রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে শুরু করে করোনা রোগীর মৃত্যুর পরেও চলছে অনিয়ম। বেসরকারি জায়গায় চিকিৎসা করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়া, অক্সিজেন নিয়ে কালোবাজারিদের দৌরাত্ম, আম্বুলেন্স পরিষেবার নামে অর্থ লুণ্ঠন, কিম্বা শ্মশানে নিয়ে যেতেও হয়রানি হচ্ছে । অথচ এখনও পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কথা ভেবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি । এই অভিযোগ তুলে রবিবার সকালে শিলিগুড়ির রাস্তায় ধর্নায় বসেন বিজেপির তিন বিধায়ক। এর পর রাজ্য সরকারের নতুন সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী রাজনৈতিক সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকায়, পুলিশ শঙ্কর ঘোষ, শিখা চট্টোপাধ্যায় ও আনন্দময় বর্মণকে গ্রেপ্তার করে ।

রাজ্যে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ রূপ নিয়ে শাসক দল দোষ দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় সরকারকে । অন্যদিকে বিরোধী দল বিজেপি অভিযোগ তুলছে রাজ্য সরকারের দিকে । তবে সত্য হল এটাই, কোন রাজনৈতিক দলই করোনা বিধি মেনে প্রচার করেননি । ফলে দোষ কম বেশী প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই থাকছে। যদিও একেবারে শেষ দিকে বাম সংগঠন এবং কংগ্রেস প্রচার থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় । রবিবার থেকে গোটা রাজ্যে আংশিক লকডাউনের পরিবর্তে কড়া লকডাউন ঘোষণা করেছে রাজ্য প্রশাসন । এই অবস্থায় তিন বিজেপি বিধায়ককে পুলিশ প্রথমে উঠে যেতে বলে। কিন্তু ধর্নায় তাঁরা অনড় থাকায় শেষমেশ গ্রেপ্তার করা হয় ।

জানা গেছে, রবিবার রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী লকডাউনের প্রথম দিনেই সকাল ৯টা নাগাদ হাশমি চকের কাছে বিজেপি কার্যালয়ের সামনে তিন বিধায়ক ধর্নায় বসে পড়েন। তাঁদের সঙ্গে অবশ্য অন্য কোনও নেতা বা কর্মী তেমন ছিলেন না। আশপাশে কয়েকটি ব্যানার ছিল। দু’একজন বিজেপি কর্মীও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। ধর্নায় বসে ওই তিন বিধায়ক অভিযোগ করেন, করোনার চিকিত্‍সা করাতে মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছেন। অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া, নার্সিংহোমের বিলে দিশেহারা রোগীর পরিবার। অথচ তার পরেও রাজ্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এর পর তাদের উঠে যাবার কথা বলা হলে বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ ১০ টা নাগাদ উঠে যাবার কথা বলেন । কিন্তু পুলিশ নাছোড়বান্দা থাকে । কিছুক্ষনের মধ্যেই শিলিগুড়ি থানার আইসি  এবং শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকেরা সেখানে উপস্থিত হন। তিন বিধায়ককে নিয়ে যাওয়া হয় শিলিগুড়ি থানায়। তাঁদের বিরুদ্ধে মহামারি আইনের নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হয় বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

এদিকে এই ঘটনায় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা পুরসভার প্রশাসক গৌতম দেব বলেন, ‘‘শুধু জনপ্রিয়তার জন্য এসব করছেন ওঁরা। সরকারি নির্দেশিকার পর এমন কর্মসূচি করা যায় না, এটা জানা উচিত ওঁদের। এখানে অবস্থান বিক্ষোভ না করে বিজেপি বিধায়কদের উচিত প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া। নরেন্দ্র মোদীকে জিজ্ঞাসা করা উচিত, কেন বাংলায় অক্সিজেন প্ল্যান্ট হচ্ছে না, কেন টিকা বাইরে পাঠানো হচ্ছে। অথচ এঁরা আন্দোলনে নেমেছেন।” তবে ঘটনা যাই হোক, তিন বিজেপি বিধায়ক আইন না মানলেও তাদের অভিযোগ একেবারে মিথ্যে নয় । সরকারের উচিৎ করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি শুধু ঘোষণা করে নয়, চিকিৎসা নিয়ে এই চরম দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা ।