দি আজকের নিউজ ওয়েব ডেস্কঃ টানা তিন মাস হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করার পর আর মাত্র একটা দিন । রাত পোহালেই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । গতবারের থেকেও অনেক বেশী জনসমর্থন নিয়ে তৃতীয় বারের মত জয়লাভ করল তৃণমূল কংগ্রেস । ‘মোদী-মমতা’ দ্বৈরথে বঙ্গ রাজনীতিতে বামকংগ্রেস জোটকে দূরবীন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । ফলে বাংলার প্রধান বিরোধী দলের তকমা এখন বিজেপির । আর এখানেই প্রশ্ন । গতবারের বিরোধী দলের তুলনায় এবারের বিরোধী দল অনেক বেশী শক্তিশালী এবং সুসংহত । ফলে শাসক দল হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেসের চ্যালেঞ্জটা আরও অনেক কঠিন হবে বলেই ধারনা করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল ।
৩৪ বছরের বাম জমানার অবসান ঘটেছিল তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই । একটা সময় বঙ্গ রাজনীতি ছিল মূলত কংগ্রেস এবং সিপিএম নির্ভর । কংগ্রেস একটা সময় যখন ক্ষমতায় ছিল তখন বিরোধী হিসাবে বামদল ছিল অনেক শক্তিশালী । অপর দিকে, বামেরা ক্ষমতায় এলে, বিরোধী হিসাবে কংগ্রেস নিজেদের ঠিক ততটা মেলে ধরতে পারেনি । এরপর ১৯৯৮ সালে ঘটন হল তৃণমূল কংগ্রেস । ২০০১ সালে প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে ৬০টি আসন দখল করে । ফলে বাংলার প্রধান বিরোধী দল হিসাবে নিজেদের তুলে ধরে খুব অল্প সময়ের মধ্যে । ঠিক একইভাবে একসময় যে জায়গায় ছিল তৃণমূল এখন সেই স্থানেই উঠে এল বিজেপি। ৩টি আসন থেকে একধাপে ৭৭। যা স্বাভাবিকভাবেই চিন্তার বিষয় শাসকদল তৃণমূলের।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আরও কিছু বিষয়ের উপর নজর দিয়েছেন । প্রথমত কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা থেকে জিতে মুকুল রায় খুব সম্ভবত রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা হতে পারেন । অন্যদিকে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জিতে আসা শুভেন্দু অধিকারীকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে । এছাড়া, ২০২১ শের বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে, গেরুয়া শিবিরের ভোট কম পাওয়ার পিছনে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছু অংক কাজ করেছে । যেমন, এবারের নির্বাচনে, যতটা না তৃণমূল বনাম বিজেপি হয়েছে, তার চেয়েও বেশি মানুষ ভেবেছে কেন্দ্রের শাসকদলের অনাচার নিয়ে।সারাদেশে নতুন কোনও শিল্প, চাকরি নেই। বেকারত্বের হার সর্বকালীন রেকর্ড করেছে। অর্থনীতি কার্যত ভেঙে পড়েছে। পেট্রোপণ্য, রান্নার গ্যাস থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশছোঁয়া দাম। করোনা পরিস্থিতিতে ডাহা ফেল মোদি সরকার। ফলে এই ফ্যাক্টরগুলি তৃণমূলকে আরও বেশী জনসমর্থন জুগিয়েছে ।
এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এলেও হাফ ছেড়ে বাঁচার উপায় নেই । কেননা, দলের নিচুতলার নেতাদের দুর্নীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহল বাংলার মানুষ। সারদা, নারদা তো আছেই । এই সব দিক আগামিদিনে মাথায় রেখে এবং দলীয় ইস্তেহার মেনে সাধারণ মানুষকে নিয়ে কাজ করা সহজ হবে না । ভুল চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেশিয়ে দেবার জন্য শুভেন্দু অধিকারী কিম্বা মুকুর রায় একারাই অনেক ভুমিকা নিতে পারেন । ওয়াকিবহল মহলের মতে প্রধান বিরোধী দলের তকমা পাওয়া বিজেপি আরও কঠোর ভাষায় তৃণমূলের শাসনের ব্যর্থতা ও ভুলগুলো ধরিয়ে দেবে। সেগুলির সমালোচনা না করে দ্রুত ভুল শুধরে নিতে হবে সরকারকে। রাজনীতির মাঠে সংকীর্ণ হিন্দুত্ববাদকে ছড়িয়ে দিয়ে বিজেপির বড় জনসমর্থন তৈরির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে রাজ্যে শান্তির পরিবেশ বিঘ্ন ঘটানোর সুযোগ খুঁজবে বিজেপি, তা পরিস্কার। কিন্তু রাজ্যে যাতে কোনওরকম হিংসা না হয়, সেদিকটাও নিশ্চিত করা কঠিন হবে মমতার পক্ষে । সব মিলিয়ে একটাই কথা, বেশী ভুল করলে মানুষ আবার বিকল্প খুঁজে নিতে চাইবে । আর সেক্ষেত্রে, বিজেপি হবে সেই বিকল্প দল !