দি আজকের নিউজ ওয়েব ডেস্কঃ ২০১৯ সালে পুলওয়ামাতে শহীদ ভারতীয় জওয়ান মেজর বিভূতিশঙ্কর ধোন্দিয়ালের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী স্বামী মারা যাবার পর বলেছিলেন, ‘তুমি বলেছিলে তুমি আমাকে ভালবাসো। কিন্তু সত্যিটা হল, দেশকে তুমি তার চেয়েও বেশি ভালবাসো। আমি সত্যিই গর্বিত।’ স্বামীকে নিয়ে গর্বিত নীতিকা কল এবার দেশ মাতৃকার সেবায় সেই সেনাবাহিনীতেই যোগদান করলেন ।
২০১৯ সালেে ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামা হামলায় অন্যতম শহীদ মেজর বিভূতিশঙ্কর ধোন্দিয়াল । ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দেশের প্রতি মহান আত্মত্যাগের জন্য মরণোত্তর শৌর্য চক্র পুরস্কারে ভূষিত করা হয় । স্বামীর মৃত্যুতে শোকে ভেঙ্গে পড়েন তার স্ত্রী নীতিকা কল । খুব কম সময়ের জন্য স্বামীকে কাছে পেয়েছিলেন তিনি । বিবাহের ৯ মাসের মাথায় স্বামী মেজর বিভূতিশঙ্কর ধোন্দিয়াল দেশের জন্য নিজের প্রাণ বলিদান দেন । স্বামীর মৃত্যুর পর স্বামীর কাজকে সম্মান জানাতে ৬ মাসের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন তিনি ।
বিয়ের পরেও একটি বহুজাতিক সংস্থায় উচ্চ বেতনে চাকরি করতেন নীতিকা কল । স্বামীর মৃত্যুর ৬ মাসের মধ্যে নিজের শোক কাটিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে স্বামীর অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চেয়েছেন তিনি । ২০২০ সালে শর্ট সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন নীতিকা। এরপর ইন্টারভিউ পর্ব পেরিয়ে গত ২৬ মে চেন্নাইয়ে অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমি থেকে পাশ করার পর শনিবার তিনি যোগ দিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। লেফটেন্যান্ট নীতিকা এখন ভারতীয় সেনার নর্দার্ন কম্যান্ডের সদস্য।
মেজর বিভূতিশঙ্কর ধোন্দিয়াল এবং নীতিকা কলের এই কাহিনী যেন বাস্তব আর সিনেমার মেলবন্ধন । বিয়ের ৯ মাসের মাথায় শহীদ স্বামীর কাজকে শ্রদ্ধা জানাতে এমন বড় সিদ্ধান্ত বাস্তব জীবনে খুব কম দেখা যায় । স্বামীর মৃতদেহ আসার পর, শোকস্তব্ধ নীতিকা সেই সময় স্বামীকে নিয়ে একটাই কথা বলেছিলেন, ‘তুমি বলেছিলে তুমি আমাকে ভালবাসো। কিন্তু সত্যিটা হল, দেশকে তুমি চার চেয়েও বেশি ভালবাসো। আমি সত্যিই গর্বিত। আমরা সবাই তোমাকে ভালবাসি। তোমাকে আমার স্বামী হিসেবে পেয়ে আমি গর্বিত। আমার জীবন তোমাকেই উত্সর্গ করেছি।’
বিবাহের আগে থেকেই মেজর বিভূতিশঙ্কর ধোন্দিয়াল এবং নীতিকা কলের পরিচয় ছিল । তারা এক সাথে এমবিএ করেছেন । সেই সময় প্রথম বন্ধুত্ব, তারপর প্রেম এবং পরে বিবাহ । মাত্র নয় মাস বিয়ে হলেও একসাথে খুব বেশী দিন তারা বিবাহিত জীবন কাটাতে পারেন নি । অথচ, সেনাবাহিনীতে ইন্টারভিউতে ২৮ বছরের নীতিকাকে বিবাহিত জীবন নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল । সেখানে তিনি উত্তর দিয়েছেন, ‘দুই বছর’ । এর পর তিনি বলেন, ‘বিভূ শারীরিকভাবে নেই ঠিকই, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমাদের বিয়ে আর নেই। বিভূ সবসময়ই আমার সঙ্গে রয়েছে।’ স্বামীর প্রতি অসীম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও দেশমাতৃকার প্রতি নীতিকা কলের এই দায়িত্ব সত্যি বিরল দৃষ্টান্ত । স্যালুট মেজর বিভূতিশঙ্কর ধোন্দিয়াল, স্যালুট নীতিকা কল !