দি আজকের নিউজ ওয়েব ডেস্কঃ ফের মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালের পারস্পারিক বিরোধ শুরু হল । জিটিএ (GTA) এবং জৈন হাওয়ালা (Jain Hawala) মামলা নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে সরব হবার পাশাপাশি রাজ্যপাল প্রশ্ন তুললেন, প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে । তিনি জানালেন, ২ হাজার কোটির মহামারি কেলেঙ্কারির তদন্ত মুখ্যমন্ত্রী শুরু করেছিলেন, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে। কিন্তু সেই রিপোর্ট সামনে আনা হয়নি !
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে কটাক্ষ করে জৈন হাওয়ালার পাশাপাশি রাজ্যপালের উত্তরবঙ্গ সফর এবং ভোট-পরবর্তী হিংসার অভিযোগ প্রসঙ্গ এনেছেন ! এবার পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যপাল হাওয়ালা কেলেঙ্কারিতে নাম থাকা সহ যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন । সেই সাথে হুশিয়ারি দিলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের সেবক হিসাবে আমি কখনোই মাথা নত করব না। আমি শুধু ভারতের সংবিধানের সামনেই ঝুঁকবো। সংবিধানকে রক্ষা করার জন্য আমি আমার ক্ষমতায় থাকা সব কিছুই করতে পারি। ২ হাজার কোটির মহামারি কেলেঙ্কারির তদন্ত মুখ্যমন্ত্রী শুরু করেছিলেন, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে অসঙ্গতি আছে। কোটি কোটি টাকার অর্ডার কাদের দেওয়া হয়েছে তা কেউ জানে না। এই সংক্রান্ত কোন রিপোর্টই প্রকাশ করেননি তিনি।’
শাসক দল বারবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে বিজেপির হয়ে কাজ করার অভিযোগ তুলেছেন । প্রসঙ্গত, রাজ্যপাল নিজে একসময় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসাবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন । ফলে আইন বা সংবিধান নিয়ে তাঁর নিজের অনেক অভিজ্ঞতা আছে । নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করেছেন । পাল্টা হিসাবে তিনিও রাজভবনে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ খুললেন। সেখানে তিনি জানান, ‘সাংবাদিক বৈঠকে ভয়ঙ্কর অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলছেন, জৈন হাওয়ালাকাণ্ডের চার্জশিটে রাজ্যপালের নাম আছে। কখনও ভাবিনি মমতার মতো নেত্রী উত্তেজনা তৈরি করতে এই অভিযোগ করবেন। এখনও পর্যন্ত জৈন হাওয়ালাকাণ্ডে কেউ দোষী প্রমাণিত হননি। জৈন হাওয়ালাকাণ্ডে চার্জশিটে কখনই রাজ্যপাল ছিলেন না। মুখ্যমন্ত্রী যা অভিযোগ করছেন, তার কোনও সত্যতা নেই। মুখ্যমন্ত্রীর মতো একজন নেত্রীর এমন বক্তব্য আশা করিনি। অজিত পাঁজা হাওয়ালার চার্জশিটে ছিলেন, ছাড়াও পেয়েছিলেন। রাজ্যপাল কিন্তু চার্জশিটেই ছিলেন না। যশবন্ত সিন্হার নামও চাজশিটে ছিলেন, মুক্তও হয়েছিলেন। এ ব্যাপারে যশবন্ত সিন্হার মতো নেতার সঙ্গে আলোচনা করা উচিত মুখ্যমন্ত্রীর।’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী যে ভয়ংকর অভিযোগ এনেছেন, সেই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কোন পদক্ষেপ নেবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে, রাজ্যপাল একটু হেসে জানান, ‘ভারতীয় সংস্কৃতিতে ছোট বোনের বিরুদ্ধে কেউ পদক্ষেপ নেয়নি।’ উল্লেখ্য, বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শপথ বাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল । সেই সময় ভোট পরবর্তী রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা প্রতিহত করার অনুরোধ করতে গিয়ে, মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ছোট বোন’ হিসাবে সম্বোধন করেন জগদীপ ধনকড় ।
তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ যে হালকাভাবে নিচ্ছেন না তিনি, এদিন পরিষ্কার করে দিয়েছেন রাজ্যপাল । সাংবাদিকদের সামনে তিনি জানিয়েছেন, ‘সংবিধানের শপথ নিয়েছি, বাচ্চাদের দস্তানা পরে আসিনি। করোনা চিকিৎসার সরঞ্জাম কেনায় ২,০০০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ আছে। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কমিটির রিপোর্ট সামনে এসেছে? তদন্ত কমিটি তো হয়, কিন্তু তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে না। বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসার চেহারা সবাই দেখছে। গণতন্ত্রে হিংসার কোনও জায়গা নেই। ওনার কী নিয়ে সমস্যা, তা আমি জানি। যা অভিযোগ করছেন মুখ্যমন্ত্রী, তা সত্য থেকে বহু দূরে।’