দি আজকের নিউজ ওয়েব ডেস্কঃ গত কয়েকদিন ধরে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত নিয়ে খবরের শিরোনামে উঠে এদেছে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন মুখোপাধ্যায়ের নাম । এবার তাঁর নামে কেন্দ্রের তরফ থেকে ফৌজদারি মামলার পথে হাঁটা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে । ফলে ফের মোদী-মমতা লড়াই নতুন মাত্রা পেতে চলেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে । কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আলাপনের বিরুদ্ধে, বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ভঙ্গের অভিযোগ আনা হতে পারে । উল্লেখ্য, এই আইন ভঙ্গকারীর এক বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানারও বিধান রয়েছে।
গত শুক্রবার কেন্দ্র থেকে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিবকে ১৯৫৪ সালের ‘ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস (ক্যাডার) রুলস’-এর ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আলাপনকে দিল্লিতে তলব করেছিল। সেখানে রাজ্যর মুখ্যমন্ত্রী তাকে ছারার ব্যাপারে অনড় মনোভাব দেখিয়েছিলন । গত সোমবার আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় অবসর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা হিসাবে যোগ দেন । ফলে বুদ্ধির চালে মমতার কাছে মাত হয় মোদী সরকার । এরপরেই আলাপনের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা সাজাতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন্দ্রীয় সরকার আগেই হুশিয়ারি দিয়েছিল, আলাপনের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে । কিন্তু আইএএস (ক্যাডার) রুলস মোতাবেক আলাপনের বিরুদ্ধে এই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব ছিল না । কারন এমনিতেই রাজ্যের অধীন কোনও অফিসারের বিরুদ্ধে কেন্দ্র শৃঙ্খলাভঙ্গের ব্যবস্থা নিতে পারে না। আলাপনের পক্ষে যুক্তি ছিল, তাঁকে রাজ্য সরকার দিল্লিতে যাওয়ার ছাড়পত্র দেয়নি। ফলে এইবার তাকে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ফাঁদে ফেলতে চাওয়া হচ্ছে ।
কিভাবে মমতার মুখ্য উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ? বিপর্যয় মোকাবিলা আইন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, সোমবার আলাপনকে পাঠানো শো-কজ নোটিসেই বলা রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কলাইকুন্ডায় পৌঁছে রাজ্যের আমলাদের জন্য ১৫ মিনিট অপেক্ষা করেন। মুখ্যসচিবকে ফোনে জানতে চাওয়া হয়, তিনি বৈঠকে যোগ দিতে চান কি না ? তার পরে মুখ্যসচিব মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক কক্ষে ঢুকে একটু পরেই বেরিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। তিনি ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনায় বসেছিলেন। আলাপন সেখানে হাজির না হয়ে কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করেছেন। তা বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৫১(বি) ধারার লঙ্ঘনের সমান বলে ওই সূত্রের দাবি। এই ধারায় কেন আলাপনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা তাঁকে তিন দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি যদি সন্তোষজনক না হয়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়তে পারে ।
সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদী সরকারকে জানিয়ে দেয়, মুখ্যসচিব হিসাবে আলাপনকে তিনি ছাড়ছেন না । এরপরেই আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যসচিব হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি থেকে অবসর নেন এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা হিসাবে রাজ্যসরকারের আওতায় চলে আসেন । কিন্রু সেই দিনই কেন্দ্র থেকে কর্মিবর্গ মন্ত্রক আইএএস (ক্যাডার) রুলস উল্লেখ করে আলাপনকে মঙ্গলবার দিল্লিতে তলব করে। একইসঙ্গে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন (ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট)-এ আলাপনকে শো-কজ নোটিস পাঠানো হয়।
এদিকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দলীয় নেতা সুখেন্দুশেখর রায়ের যুক্তি, বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে মুখ্যসচিবকে কোনও নির্দেশ জারি করা হয়নি। ফলে ওই আইনে শো-কজ নোটিস আইনত ধোপে টেকে না। তবে রাজনৈতিক মহলের ধারনা, এই মুহূর্তে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্র কোন ফৌজদারি ব্যবস্থা নিলে মোদী-মমতা সংঘাত ফের নতুন মাত্রা পাবে । সেক্ষেত্রে, দেশের বিজেপি বিরোধী দলগুলি মমতার পাশে দাঁড়িয়ে যাবে । ফলে কেন্দ্র আলাপনকে নিয়ে অনড় থাকলে তাঁর প্রভাব জাতীয় রাজনীতিতে পড়বেই বলে ধারনা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ।