দি আজকের নিউজ ওয়েব ডেস্কঃ আজ নবান্নে মমতার প্রথম মন্ত্রীসভার বৈঠকদের দিনেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হিসাবে শুভেন্দু অধিকারীকে বাছাই করা হল । হেস্টিংসে বিজেপির পরিষদীয় দলের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে রাজ্যের বিরোধী নেতা হিসাবে নন্দীগ্রাম কেন্দ্র থেকে জয়ী বিধায়ককে আগামীদিনের দলনেতা হিসাবে মনোনয়ন করেছে গেরুয়া শিবির । এরপরেই শুভেন্দু আত্মবিশ্বাসের সাথে জানিয়ে দিলেন, শুধুমাত্র ৭৭ জন বিজেপি বিধায়কের নেতা হিসাবে নন, বরং ২ কোটি ২৭ লাখ মানুষ, যারা বিজেপির পাশে ছিল, তাদের প্রতিনিধি হিসাবেই বিধানসভায় যাচ্ছেন তিনি ।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস ঐতিহাসিক জয়লাভ করে তৃতীয়বারের মত বাংলার ক্ষমতায় এলেন । ২০০ আসন পার করার প্রত্যাশা নিয়ে ভোটে লড়াই করলেও মাত্র ৭৭ আসন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে গেরুয়া দলকে । বিজেপি-তৃনমূলের লড়াইয়ে একেবারে ধরাশায়ী বাম-কংগ্রেস জোট । তাদের যৌথ শক্তিতেও বিধানসভায় প্রবেশের রাস্তা খোলেনি । এই অবস্থায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হিসাবে শুভেন্দু অধিকারীকে নির্বাচন করল বিজেপি । এরপরেই দৃপ্ত কণ্ঠে, শুভেন্দু জানিয়ে দিলেন, ‘আমি ৭৭ জনের প্রতিনিধি নই। যে দু’কোটি ২৭ লক্ষ মানুষ বিজেপির পদ্মফুল চিহ্নে ভোট দিয়েছেন তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবেই আমি বিধানসভায় লড়াই করব। শিষ্টাচার মেনেই বাংলায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই চলবে।’
রাজ্যে নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে রাজনৈতিক হিংসা অবিরাম চলছে । কোথাও কোথাও শাসক দল আক্রান্ত হলেও অধিকাংশ অভিযোগের তীর তৃনমূলের দিকে । এই প্রসঙ্গে, বিরোধী দলনেতা হিসাবে শুভেন্দু জানান, ‘গোটা রাজ্যজুড়ে রণসংঘর্ষ চলছে। প্রান্তিক আদিবাসী, দলিত, পিছিয়ে পড়া মানুষের সর্বস্ব লুঠ হচ্ছে। এখন প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে এই সংঘর্ষ থামানো।’ একদা মমতার বিশ্বস্ত সৈনিক হিসাবে রাজনীতি করলেও, বিধানসভা নির্বাচনের আগে গেরুয়া দলে যোগ দিয়েছেন তিনি। তখন থেকেই জানিয়ে আসছেন, তৃণমূল দল আসলে ফর দ্য পার্টি, বাই দ্য পার্টি, অফ দ্য পার্টি। তাকে ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপ, অফ দ্য পিপল করতে বিজেপি পরিষদীয় দল লড়াই করবে । এই অবস্থায় রাজ্যে বিজেপি অনুগামীদেরও আশস্ত করলেন নন্দীগাম থেকে জয়ী বিধায়ক ।
বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিরোধী দল হিসাবে বিজেপি অবস্থান নিয়েছে । দলে বিরোধী দলনেতা হিসাবে দুই জনের নাম প্রবলভাবে উঠে আসে । প্রথমত, রাজ্যে বিজেপি চাণক্য মুকুল রায় । যিনি কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায় এবং ২০১৯ শে বিজেপির দারুণ ফল করার পিছনে অন্যতম কারিগর । অন্যজন, তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা শুভেন্দু অধিকারী । নির্বাচনের আগে রীতিমত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করেছেন । তবে এই দড়ি টানাটানির লড়াইতে শেষ পর্যন্ত উঠে এল শুভেন্দু অধিকারীর নাম । বয়স জনিত কারনে শেষ পর্যায়ে মুকুল রায় বিরোধী দলনেতা হিসাবে নিজের নাম প্রত্যাহার করেন ।
আজ বিজেপির পরিষদীয় দলের বৈঠকে বিরোধী দলনেতা হিসেবে শুভেন্দু অধিকারীর নাম প্রস্তাব করেন বিজেপির রাজ্য চাণক্য । এদিন বৈঠকে ৭৭ জন বিধায়কের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৫২ জন । বাকী ২৫ জনের অনুপস্থিতির কারন ব্যাখ্যা করেছেন রাজ্যসভাপতি দিলীপ ঘোষ । তিনি জানান, বেশ কিছু জায়গায় সংঘর্ষ চলছে। বিজেপি কর্মীরা আক্রান্ত। তাই সেই এলাকার বিধায়করা তাঁদের পাশে থাকার কারনে বৈঠকে যোগ দেননি। এদিন বিরোধী দলনেতা হিসাবে, আগামিদিনে গণতান্ত্রিক পথে, শিষ্টাচার মেনে লড়াই হবে । হিংসা মুক্ত বাংলা, শান্তির বাংলা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়েই আমরা সবাই তা করব ।