দ্য আজকের নিউজ ওয়েব ডেস্কঃ ক্রমেই বার্ডফ্লু আতঙ্ক বাড়ছে । বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন্স, ভিয়েতনামের মত দেশগুলিতে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস । কারন হিসাবে তাঁরা দাবী করেছেন, হাঁস-মুরগীর মাধ্যমে এই বার্ডফ্লু ভাইরাস ছড়ায় এর এই ধরনের উন্নয়নশীল দেশগুলিতে চীনের মতই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় খোলা বাজারে হাঁস-মুরগি বিক্রি হয়৷এবার প্রশ্ন – হাঁস-মুরগীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস মানুষের মধ্যেও কি ছড়িয়ে পড়তে পারে !
বার্ডফ্লুর ভাইরাসের নাম এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (H5N1)। এই ভাইরাসের কবলে প্রধানত পাখিরা আক্রান্ত হয় । এর ফলে মানুষের মতই পাখিদের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে এবং ঠিক মত চিকিৎসা না হলে মারাও যায় । বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (H5N1) দ্বারা আক্রান্ত হাঁস-মুরগি থেকে ভাইরাসটি মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে৷ গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বিচার করলে দেখা যাবে, ভারত, বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পোল্ট্রি শিল্পের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে এই ভাইরাসের কবলে পড়ে ।
এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (H5N1) ছাড়াও আরও একটি ভাইরাস মানবদেহে সংক্রমণ ছড়াতে পারে । সেটির নামH7N9 । বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, H5N1 ভাইরাস মানুষের জন্য H7N9-এর তুলনায় অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এর সংক্রমণ শনাক্ত করা সহজ৷ H5N1 এর ক্ষেত্রে, সংক্রমণের তিন থেকে ১০ দিনের মধ্যে আক্রান্ত মুরগির পালক উসকোখুসকো হয়ে যায়, ঝুঁটির গোড়া ও পায়ের পাতায় রক্তক্ষরণ হয়৷ ডিম উৎপাদন কমে যায় এবং মুরগি শ্বাসকষ্টে ভোগে৷ কিন্তু H7N9-এর ক্ষেত্রে তেমন লক্ষন দেখা যায় না । ফলে সময় মত রোগ নির্বাচন কিম্বা চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না ।
বার্ড ফ্লুতে মানুষের আক্রান্ত হবার বিষয়ে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানব দেহে সাধারনত H5N1 ভাইরাস ছড়ায় । এখনও পর্যন্ত H7N9 ভাইরাসের সংক্রমণ মানুষের শরীরে পাওয়া যায়নি ।দেখা গেছে, সাধারনভাবে যাঁরা পোল্ট্রি খামারে কাজ করেন অথবা বাজারে হাঁস-মুরগি বিক্রি করেন, তাঁদেরই বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে৷ চীনের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বড় পোল্ট্রি ফার্মগুলোর তুলনায় ছোট খামারগুলোতে বার্ড ফ্রু সংক্রমণের হার বেশি ।
ভারতে বার্ডফ্লু ধীরে ধীরে বাড়ছে । ইতিমধ্যে একের পর এক বার্ড ফ্লু সংক্রমণের ঘটনা সামনে আসায় বেশ কিছু রাজ্যে পাখি নিধনের অভিযান শুরু হয়েছে। বিগত বছরগুলিতে দেখা গেছে, বার্ড ফ্লু আক্রান্ত পাখি বা মুরগীর সংস্পর্শে আসা প্রাণী এবং মানুষ সহজেই এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। মানব শরীরের জন্য যথেষ্ট বিপদের কারন এই ভাইরাস । সময়মত চিকিৎসা শুরু না করা গেলে, আক্রান্ত ব্যাক্তির মৃত্যু হতে পারে ।
মানব শরীরে আক্রান্ত হবার লক্ষনঃ-
বার্ড ফ্লু ভাইরাস দ্বারা মানুষের শরীর আক্রান্ত হলে, কাশি, ডায়রিয়া, জ্বর, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, নিউমোনিয়া, গলা ব্যথা, নাকের স্রাব, অস্থিরতা, চোখের সংক্রমণের মত একাধিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে । বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারনে চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেকটাই ব্যহত হচ্ছে । এর মধ্যে বার্ডফ্লুতে আক্রান্ত হলে, বিপদের সম্ভবনা অনেকখানি বেড়ে যাবে ।
বিশেষজ্ঞরা এই বার্ড ফ্লু থেকে সাবধান হবার জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন । বার্ড ফ্লুর থেকে দূরে থাকার পরামর্শঃ-
১. বার্ড ফ্লু ভাইরাস একটি মারন ভাইরাস । আক্রান্ত ব্যাক্তির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে ।
২. হাঁস-মুরগির খামারের সঙ্গে যুক্ত মানুষের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ফলে সবচেয়ে বেশি সাবধান থাকতে হবে, খামারে কর্মরত মানুষদের । ৩. খামার ছাড়াও বার্ডফ্লু সংক্রামিত স্থান পরিদর্শন করা, সংক্রামিত পাখির সংস্পর্শে আসা, কাঁচা বা রান্না করা ডিম খাওয়া বা আক্রান্ত রোগীদের যত্ন নেওয়া ব্যক্তিও বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্ত হতে পারেন বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন । ৪.সাবধানতা হিসাবে হাত সাবান দিয়ে ভাল করে (অন্তত ১৫ সেকেন্ড) ধুতে হবে । জীবাণুমুক্ত করার জন্য স্যানিটাইজার সব সময় কাছে রাখতে হবে । এ ছাড়া, করোনার সাবধানতা হিসাবে যেমন মুখে মাস্ক থাকে, ঠিক তেমনভাবে ব্যবহার করতে হবে । ৫. খামারগুলিতে যুক্ত থাকা ব্যাক্তিদের পিপিই কিট পরে কাজ করা উচিত । ৬. সন্দেহ হলে দেরি না করে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে ।