দি আজকের নিউজ ওয়েব ডেস্কঃ বর্তমান কালের একজন তরুণ লেখক এন কে মণ্ডলের লেখনী থেকে এবার প্রকাশিত হতে চলেছে নতুন উপন্যাস ‘সুন্দরী কন্যা’ । উপন্যাসটি বেশ কয়েকটি পর্বে সমাপ্ত । আজ থেকে ধারাবাহিকভাবে ‘সুন্দরী কন্যা’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হচ্ছে আমাদের সাইটে । লেখা পড়ে ভাল লাগলে আপনাদের মতামত জানতে দ্বিধা করবেন না ।
সুন্দরী কন্যা (দ্বিতীয় পর্ব)
কয়েকদিন পরে বিকেলের দিকে মাঠের ধারে আজিজদের বাড়ির কাছে বল খেলার মাঠ আছে ৷ সেখানে ছেলেরা বিকেলে আড্ডা দেয় ৷ গ্রামের প্রধান পথের মধ্যে একটি ৷ মেয়েরা আসে ৷ খেলে ৷ যুবতী মেয়েরা বেড়াতে আসে ৷ ঘোরাফেরা করে ৷ ছেলেরা তাঁকায় ৷ মেয়েরা তাঁকায় ৷ কথা হয় ৷ গল্পও করে ৷ এখন যুগের হাওয়া আলাদা ৷ গ্রামেও শহরের মতো ফ্যাশন মর্ডান হয়ে গেছে ৷ অলিতে গলিতে শোনা যায় মাঝে মধ্যে , এর বৌ ধরা পড়েছে ৷ ওর মেয়ে কোন ছোড়ার সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছে ৷ সন্ধ্যাবেলা হলেই চায়ের দোকানে নানান আড্ডা হয় ৷ পরচর্চা পরনিন্দা ৷ রাজনৈতিক গল্প ৷ চাষ আবাদের গল্প ৷ এক কাপ চা খায়, পাঁচ ঘন্টা গুলতানি মারে ৷ সেসবদিক থেকে সম্পুর্ন আলাদা আজিজ ছেলেটা ৷ বসে আছে বল খেলা ফিল্ডে, এমন সময় রহিম ঘটক ডাক দেয় ৷ রহিমের ডাকে আজিজ উঠে আসে ৷ রাস্তাতেই সাইকেলে দাঁড়িয়েছিল রহিম সেখ ৷ আজিজ রহিমের কাছে এসেই বলল,
আজিজ : বলো দাদো ৷
রহিম : তাহলে আগামীকাল মেয়ে দেখতে চল ৷
আজিজ : কোথায় ৷
রহিম : ভবানীপুরে ৷
আজিজ : ওহ ৷ তো দাদো আমি বলছিলাম কি , আমাকে আগে দেখে যাক ৷ আমার বাড়ি ঘর কেমন ৷ আমার সঙ্গে বিয়ে দেবে কি না ৷
রহিম : ওসব কিছু দেখবে না ওরা ৷ দেখার মত কেউ নেই ওদের ৷ আমাকেই ওরা বিশ্বাস করে ৷ আমি যা করব তাই হবে ৷ আর মেয়ে একদম রাজপরি ৷ খুব ভালো ৷
আজিজ : অন্তত মেয়ের বাবা দেখে গেলে ভালো হত না ৷
রহিম : মেয়ের কেউ নেই, একমাত্র দাদি ছাড়া ৷
আজিজ : মা বাপ মরা মেয়ে তোর দু:খ বুঝবে বুঝলি ৷ মেয়ে খুব ভালো ৷ কবে যাবি বল, আমাকে দিন দিতে তো হবে ৷
আজিজ : তোমার দিনেই দিন ৷ আমি আর কি বলব ৷
রহিম : তাহলে আগামীকালকেই কথা দিই, কি বলিস ৷ কিছু টাকা পয়সা নিবি নাকি ৷
আজিজ : আমি খেতে পায় না, টাকা পয়সা চাইব ৷ মেয়েটা দেবে কি সন্দেহ ৷ আর আমি কিছুই নেব না ৷ আমার মা এসব একদম বিরোধী ছিলেন ৷ আর আল্লাহ পণ নেওয়াকে হারাম করেছেন ৷ ওসব কিছু নেব না ৷ কিছুই চাই না ৷
রহিম : ঠিক আছে, আমি রাত্রে ফোন করে বলে দিব ৷ তুই বিকেলের দিকে রেডি হয়ে থাকিস কিন্তু ৷
রহিম চলে যেতেই, পাশ দিয়ে একদল মেয়েরা যাচ্ছিলো ৷ ওদের মধ্যে একজন বলে উঠলো, কি ভাইয়া বিয়ে লাগছে নাকি ৷
– হ্যাঁ ৷
-তাহলে তো খাওয়াতে হবে কিন্তু ৷
– সে হবে, যদি উপরওয়ালা করাই হবে ৷
মেয়েরা আজিজকে ছেড়ে চলে যেতে যেতে একজন সুন্দরী মেয়ে বলে উঠলো, ওই গেঁয়ো ভূতকে কোন মেয়ে এখনকার বিয়ে করবে শুনি ৷ কোন শখ আল্লাদ নেই ৷ ছেলে বলেই মনে হয় না ৷ ভেড়ুয়া ৷ অহংকার করেই বলল ৷ কয়েকজন হাসিতে ফেটে পড়লো৷ দুজন হাসলো না ৷ আজিজ কথাগুলি শুনতে পেয়েও কোন জবাব দিলো না ৷ দু:খ হল ৷ বুকের ভিতরে চিনচিন করে ব্যাথা উঠতে লাগলো ৷ চোখে জল আসা এই আর কি ৷ মনে মনে বলল, হায় আল্লাহ গরীব হওয়া কি দোষ ৷ আমি লেখাপড়া করতে পারি নি ৷ আমি জামা কাপড় ভালো কিনতে পারি না৷ আমি কোন স্ট্যাইল করতে জানি না বলে আমায় কত লোকে কত কথা বলে ৷
মনে মনে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির ভিতরে যাচ্ছে ৷ যেতে যেতে রাস্তার ধারে চরম হোচট খেলো ৷ ব্যাপক যন্ত্রনা হতে শুরু করলো সঙ্গে সঙ্গে ৷ কে দুপুরে গোরু বেঁধে চড়িয়েছিল ৷ খুঁটি পোঁতাই ছিল ৷ পায়ে হাত দিয়ে চেপে বসে পড়লো ৷ আল্লাহকে বলতে লাগলো, হে আল্লাহ তুমিও আমার সহায় নও ৷ যারা অসৎ পথে চলে ৷ তাঁদের কোন ক্ষতি হয় না, দুর্নাম হয় না শুধু আমারই হয় ৷ তুমিই পারবে আমাকে কষ্ট দিতে ৷ দাও যত পারো, তোমার যত কষ্ট আছে আমাকেই দাও, আমি সহ্য করব ৷ তবুও মুখ ফুটে কাউকে বলব না ৷ (চলবে)